সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মেয়র পদে প্রার্থী দেবে কিনা তা এখন চূড়ান্ত হয়নি। সিটি নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ফরমেটে ভোটের মাঠে থাকছে। তারা কেউ স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী , কেউ কাউন্সিলর প্রার্থী , কেউ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছে। এই তিন পদে জেলা ও মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকছে। এখন পর্যন্ত বিএনপির তিন নেতা মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সহ-সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল,সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন । মেয়র প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে কামাল-সাখাওয়াতের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো কথা হয়নি। এদিকে প্রার্থী হতে কি কি লাগবে তা জানতে গত ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন অফিসে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক এড.তৈমূর আলম খন্দকার। এরপর খবর ছড়িয়ে পড়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হচ্ছে তৈমূর আলম খন্দকার। এ নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা। তৈমূর স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নতুন মোড় নেবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। শেষ পর্যন্ত একই দলের কয়জন মেয়র প্রার্থী মাঠে থাকে তা সময় বলে দেবে।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে গতকাল নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালের সাথে সংবাদচর্চার এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি সংবাদচর্চাকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এটা (নাসিক) স্থানীয় সরকার নির্বাচন। কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দলের কোনো আপত্তি নেই। আমি (কামাল) নারায়ণগঞ্জ নগর উন্নয়ন কমিটির প্রার্থী। আমার আগে এড. তৈমূর আলম খন্দকার নগর উন্নয়ন কমিটির প্রার্থী ছিলো। আমার দলের সিনিয়র কোনো নেতা যদি প্রার্থী হয় ,আমাকে যদি নির্বাচন থেকে সড়ে যেতে বলে আমি নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াবো। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো।
তিনি বলেন, আমাদের সাবেক এমপির ছেলে কাউন্সিলর প্রার্থী , জেলা বিএনপির আহবায়কের ছোট ভাই কাউন্সিলর প্রার্থী । তারা তাদের পক্ষে মাঠে রয়েছে। তাহলে মেয়র প্রার্থী থাকলে দোষ কিসের?
আপনি জামায়াত নেতা মাইনুদ্দিনের সমর্থন চাইতে গিয়েছিলেন সমর্থন পেয়েছেন কি এমন প্রশ্নের জবাবে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এটিএম কামাল বলেন, জামায়াত নেতা নয়, আমি একজন ভোটারের সমর্থন চাইতে গিয়েছিলাম। উনি তো এই শহরের ভোটার। তিনি আমাকে সমর্থন দেয় নাই। মেয়র প্রার্থী হিসেবে আমি (কামাল) শামীম ওসমানের কাছে ভোট চাইতে যাবো, জাতীয় পাটির এমপি সেলিম ওসমানের কাছে ভোট চাইতে যাবো, আমি আইভীর কাছেও ভোট চাইতে যাবো।
জেলা বিএনপির আহবায়ক এড.তৈমূর আলম খন্দকার গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ১১ ডিসেম্বর দুপুরে নির্বাচন অফিসে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। কিন্তু কোন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করি নাই। নির্বাচনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে হলে কি কি প্রয়োজন এসব জানতে গিয়েছিলাম। তাছাড়া নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দিবে দল। বিএনপির হাই কমান্ড এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং বা সিদ্ধান্ত না দেওয়ার আগে আমি কিছুই করবো না। হয়তো মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করে রাখতে পারি। সেটা জমা দেওয়া হবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিয়ুর রহমান জানান, এড. তৈমূর এসেছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু শনিবার তিনি মনোনয়ন পত্র নেয়নি।
সুত্রের খবর নগর উন্নয়ন কমিটির ব্যানারে মেয়র প্রার্থী হচ্ছে তৈমূর আলম। দলের হাইকমান্ডও তাকে সমর্থন দেবে।
এদিকে ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে লড়ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। আপাতত তিনি ভাইয়ের জন্য মাঠে রয়েছেন। ৫ নং ওয়ার্ডে লড়ছেন সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের ছেলে কাউন্সিলর গোলাম মো:সাদরিল, ২৩ নং ওয়ার্ডে লড়ছেন সাবেক এমপি আবুল কালামের ছেলে আশা।
আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। তার পক্ষে ওসমান সমর্থকরা এখন পর্যন্ত মাঠে নামেনি। ক্ষমতাসীন দলের অন্য নেতারা আইভীর পক্ষে। ওসমান সমর্থকদের সমর্থন কোন দিকে যায় তা নিয়েও নেতাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মেয়র পদে ৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। অপর মেয়র প্রার্থীরা হলেন তারা হলেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস সোহেল মোল্লা, ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতী মাসুম বিল্লাহ, জয় বাংলা নাগরিক কমিটির নেতা কামরুল ইসলাম বাবু।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৫ ডিসেম্বর। ২০ ডিসেম্বর বাছাই, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৭ ডিসেম্বর।